কানাইলাল শীল । বাঙালি দোতারাবাদক, সুরকার, লোকসঙ্গীত রচয়িতা ও সংগ্রাহক

কানাইলাল শীল ছিলেন একজন বাঙালি দোতারাবাদক, সুরকার, লোকসঙ্গীত রচয়িতা ও সংগ্রাহক। লোকসঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৮৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

কানাইলাল শীল । বাঙালি দোতারাবাদক, সুরকার, লোকসঙ্গীত রচয়িতা ও সংগ্রাহক

প্রারম্ভিক জীবন

কানাইলাল ১৮৯৫ সালে (১৩০৫ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার কইরাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আনন্দচন্দ্র শীল এবং মাতা সৌদামনী শীল। মাত্র আড়াই বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যু হয়।

আট বছর বয়সে তার বেহালায় হাতেখড়ি হয় ওস্তাদ বসন্ত কুমার শীলের কাছে। এগার বছর বয়সে তিনি ওস্তাদ মতিলালের কাছে বেহালায় পূর্ণপাঠ শেষ করেন।পরে মতিলাল ধূপী নামের বিশিষ্ট বেহালাবাদকের নিকট তিনি বেহালায় উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন। পরে যাত্রাদল, গাজীর গান, কবিগান ও কীর্তনদলে যোগ দিয়ে তিনি বাংলার গ্রাম-গ্রামান্তর ঘুরে বেড়ান।

এক পর্যায়ে বিক্রমপুরের বইমহটির দরবেশ দাগু শাহ্র মাযারে জনৈক দোতারাবাদকের বাদন শুনে তিনি মুগ্ধ হন এবং বাড়ি ফিরে প্রখ্যাত দোতারাবাদক তারাচাঁদ সরকারের নিকট দোতারা শেখেন। গুরুর শিক্ষা এবং স্বীয় অধ্যবসায়ের ফলে কানাইলাল দোতারায় অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।

কানাইলাল শীল । বাঙালি দোতারাবাদক, সুরকার, লোকসঙ্গীত রচয়িতা ও সংগ্রাহক

কর্মজীবন

ফরিদপুরের অম্বিকাপুরে এক যাত্রানুষ্ঠানে কানাইলালের সাথে পরিচয় হয় পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীনের সাথে। জসীম উদ্‌দীন তাকে কলকাতায় নিয়ে যান। সেখানে তার লোকসঙ্গীত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তার অনুপ্রেরণায় তিনি লোকগান রচনা শুরু করেন এবং তার সহায়তায় গ্রামোফোন কোম্পানিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং তার গানের সাথে দোতারা বাজাতেন। পরে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা কেন্দ্রে নিয়মিত দোতারাবাদক হিসেবে যোগদান করেন।

গ্রামোফোন কোম্পানিতে কাজ করার সময় বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও সেতারশিল্পী ওস্তাদ এনায়েত খাঁর সঙ্গে কানাইলালের পরিচয় হয়। এনায়েত খাঁ তাঁর দোতারাবাদনে মুগ্ধ হয়ে কিছুদিন তাঁকে দোতারায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষা দেন। তিনি বাংলার বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরবাহারশিল্পী ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর কাছেও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তালিম এবং গুরু ‘ধর্মপিতা’ হিসেবে গ্রহণ করেন।

কানাইলাল বহু লোকগীতি সংগ্রহ ও রচনা করেছেন এবং অনেক গানের সুরও করেছেন। তাঁর গান শচীন দেববর্মণ, আববাসউদ্দীন প্রমুখ প্রখ্যাত শিল্পীর কণ্ঠে রেকর্ড হয়েছে।কানাইলাল দোতারা নির্মাণেও দক্ষ ছিলেন। তিনি তাঁর দোতারা এবং সঙ্গীত দিয়ে বাংলার লোকসঙ্গীতকে সমৃদ্ধ ও গভীরভাবে প্রভাবিত করেন।

কানাইলাল শীল । বাঙালি দোতারাবাদক, সুরকার, লোকসঙ্গীত রচয়িতা ও সংগ্রাহক

মৃত্যু

কানাইলাল শীল ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

সম্মাননা

শিল্পকলায় অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক, ১৯৮৭।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment